গল্পের নামঃ লাশ
পর্ব - ০১
লেখকঃ মতিউর রহমান
বিকেলের সূর্য অস্ত যাচ্ছিল। এমন সময় হঠাৎ গেটের সামনে প্রচন্ড শব্দ করে একটা গাড়ি এসে দাড়ালো। আমি দৌড়ে ঘর থেকে বেড় হলাম। বাহিরে বেড়িয়ে দেখি। পুলিশের গাড়ি, প্রায় দশ বারো জন্য পুলিশ গাড়ি থেকে নামলো।
আমি একটু এগিয়ে গিয়ে একজন পুলিশ অফিসারের পাশে দাড়ালাম। অফিসারের পাশে যেতেই অফিসার আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বললেন, “আপনি কি সফিকুজ্জামান হাবিব?” আমি বললাম, “না, আমি কামরুজ্জামন হারুন”।
অফিসার বললেন, “আপনি কি করেন?” বললাম, “আমি একজন সাংবাদিক, দৈনিক আজাদ পত্রিকার সম্পাদক”।
অফিসার বলল, “আচ্ছা, সফিকুজ্জামান আপনার কি হন?” আমার ভাই।
অফিসার বলল, “উনি কি এখন বাড়িতে আছেন?” আমি বললাম, “ না এই মূর্হুতে সে বাড়িতে নেই। তার অফিসের কাজে সে ময়মনসিংহ আছে।” কবে ফিরবেন? আমি জানি না।
অফিসার একটু মুচকি হেঁসে বললেন, আপনি সফিক সাহেবের বড় ভাই, তিনি যখনই বাড়িতে আসবেন উনাকে জানাবেন, তিনি যেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব থানায় এসে দেখা করে যান।
আমি কেন যে, অফিসার কে বললাম না, সে থানায় যাবে কেন?
আমি কিছু জিজ্ঞাস না করায় অফিসার চলে গেলেন।
কিছু সময়ের মধ্যে চারদিকে রাতে আধার নেমে এলো। আমি বারান্দায় বসে আছি। পাশের ঘরে জেনি কান্না করছে, কেন কান্না করছে বুঝেতে পারছি না। ওহঠাৎ করে এমন অসময় কাঁদছে কেন মেয়েটা।
জেনি সফিকের মেয়ে। তার বয়স প্রায় দুই বছর। মাঝ রাতে মাঝে মাঝে জেনি এই ভাবে কেঁধে উঠে। কিন্তু আজ সন্ধা রাতেই কেন কাধঁছে? আমি একটু চিন্তায় পড়ে গেলাম ।
ইচ্ছে করছিল জিজ্ঞাস করি, তামান্না, এই তামান্না, কি হয়েছে? জেনি এই ভাবে কাধঁছে কেন? কিন্তু জিজ্ঞাস করলাম না।
আজকে এমন একটা দিন, যে দিন আমি কোন, কেন সম্মন্ধিয় প্রশ্ন কাউকে করতে পারছি না। চারিদিকে গুটগুটে অন্ধকার তার উপরে বিদ্যুৎ নেই। বাতাসে একটা ঘুমুটভাব। চারদিকের বাতাস থমকে দাড়িয়েছে গাছের একটা পাতাও নরছে না। কেমন একটা রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি। কিন্তু সেটা কি বুঝতে পারছি না?
দূর থেকে ট্রাক্টোরের ইঞ্জিনের শব্দ ভেসে আসছে। আজকাল মানুষ জন গরু মহিষ দিয়ে হাল-চাষ করে না। তাই দেখা যায় রাত পর্যন্ত একজন মাত্র মানুষ হাল চাষ করে। এতো বিজ্ঞানেরই কারসাজি।
বারান্দার একটু সামনে বড় একটা আমগাছ তার পাশে দিয়েই নির্মান করা হয়েছে বাড়ীর সীমান প্রাচীর। প্রাচীরের পাশেই বাবার কালের একটা ডুবা, কোন এক সময় এটি আমাদের গোসলের পুকুর ছিল। ছোট বেলায় আমরা এখানে কত সাঁতার কেটেছি! আজ তা পোকার দখলে। ডুবায় ঝিঁঝিঁ পোকারা গান গাইছে। শুনতে ভালোই লাগছে কিন্তু কোন এক অদ্ভুত কারণে হঠাৎ হঠাৎ তাড়া গান গাওয়া বন্দ করে দিচ্ছে। এযেন অন্য কারোরই ইশারা।
এমন সময় জেনি চিৎকার দিযে উঠলো, সাথে তামান্নাও, আমি দৌড়ে তাদের ঘরে গেলাম।
ঘরটা অন্ধকার কিছু দেখা যাচ্ছেনা। আর্শ্চযের ব্যাপার ঘরে কোনো কান্নার শব্দ শুনা যাচ্ছে না। তাছাড়া ঘরে কেউ আছে বলেও মনে হচ্ছে না। তাহলে বিষয়টা কি? আমি একটু ভয় পেয়ে গেলাম।
এমন সময় রান্না ঘরের বাসন পত্র পড়ে যাওয়ার আওয়াজ পেলাম। তার কিছুক্ষন পড়ে বাড়ির পিছনের দড়জাটা ধরাম করে বন্ধ হওয়ার আওয়াজ পেলাম। সাথে সাথে আমি দৌড়রে সেদিকে গেলাম। অন্ধকারে দৌড়াতে গিয়ে কিছু একটার সাথে ধাক্কা খেয়ে ড্রইং রুমের মেজেতে হুমরি খেয়ে পড়লাম। তখন আমার হাতে ঠান্ডা তরল পদার্থ জাতীয় কোন কিছুর ছুয়া অনুভব করলাম। এটা জল না আমি পোরো পুরি ভাবে নিশ্চিত, এই তরল পদার্থ অন্য কিছু। আমি জিব দিয়ে চেটে দেখলাম, বুঝা গেল নুনতা নুনতা ভাব। সাথে আমি চিৎকার দিয়ে ওঠলাম “রক্ত”।
চলবে..............................
0 Comments